আজ শনিবার, ১৩ই পৌষ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ২৮শে ডিসেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

‘কুখ্যাত সন্ত্রাসী শামীম ওসমান’

স্টাফ রিপোর্টার :

কোটা সংস্কার আন্দোলনে নারায়ণগঞ্জে অস্ত্র হাতে দেখা গিয়েছিল আওয়ামী লীগ এবং ছাত্রলীগ নেতাদের। আন্দোলন দমিয়ে রাখতে মরনাস্ত্রের ব্যবহার করেছে তৎকালিন প্রভাবশালী এমপি শামীম ওসমান ও তার পুত্র এবং ভাতিজা; এমন অভিযোগও ছিলো আন্দোলকারীদের। করাপশন ইন মিডিয়া নামক একটি চ্যানেল শামীম ওসমানপুত্র অয়ন ওসমানের কেজিএফ স্টাইলে গুলি বর্ষণের ভিডিও প্রকাশ পায়। এতে দেখা যায়, অয়ন যখন গুলি ছুড়ছিল, তখন পাশেই দাঁড়িয়ে ছিলেন শামীম ওসমান। ক্ষমতা হারিয়ে সেই শামীম ওসমান এখন স্বপরিবারে পালিয়ে বেড়াচ্ছে। তবে, সেদিনের সেই গুলি বষর্ণের ঘটনা নিয়ে আলোচনা থামছেই না। এবার নারায়ণগঞ্জ জেলা বিএনপির সভাপতি এবং সাবেক এমপি বীর মুক্তিযোদ্ধা মুহাম্মদ গিয়াসউদ্দিনের মুখেও সেই একই কথা শোনা গেছে। পাশাপাশি তিনি এ-ও বলেছেন, এসব কর্মকাণ্ডের জন্য কোনোভাবেই ছাড় পাবেন না তারা। গিয়াসউদ্দিনের এমন মন্তব্যের পর হতাহতদের স্বজনরা বলছেন, এবার অন্তত ছাড় পাবেন না শামীম ওসমান। বিচারের আওতায় আসতে হবে তার পুত্র এবং ভাতিজাকেও।
জানা গেছে, কোটা আন্দোলন ঘিরে তাণ্ডব শুরু হলে সারা দেশে ইন্টারনেট বন্ধ করে দিয়ে আন্দোলন দমনের চেষ্টা চালায় আওয়ামী লীগ সরকার। গত ১৯ জুলাই শুক্রবার দুপুরের পরই আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ে শহরের ডিআইটি থেকে শুরু করে ফতুল্লার জালকুড়ি পর্যন্ত বিভিন্ন স্থানে গুলি চালায় শামীম ওসমানের কর্মীরা। এসময় অনেককে পিস্তল হাতে নিয়ে শোডাউনও করতে দেখা গেছে বলে আন্দোলনকারীরা জানিয়েছেন।
প্রত্যক্ষদর্শীরা বলছেন, কোটা আন্দোলনে অংশ নেয়া ছাত্র-জনতার বিরুদ্ধে গুলি বর্ষণের মাধ্যমে শামীম ওসমান যখন নগরীর নিয়ন্ত্রণ নেন, ওই সময়ে নয়ামাটি এলাকায় ৪তলা ভবনের ছাদে বাবার কোলে থেকেও গুলিবিদ্ধ হয়ে খুন হন শিশু রিয়া গোপ। একই সময়ে ডিআইটি এলাকায় গুলিবিদ্ধ হয়ে হত্যাকাণ্ডের শিকার হন রাসেল নামে একজন গার্মেন্টস কর্মী।
এদিকে, ১৯ জুলাই বিকেলে ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ লিংক রোডের জালকুড়ি এলাকায় যুব উন্নয়ন কার্যালয়ের সামনে এলোপাথারী গুলি ছোড়েন শামীম ওসমান, তার পুত্র অয়ন ওসমান, শ্যালক তাদের সহযোগিরা। একই সময়ে যুব উন্নয়নের সামনে সুজন নামে এক শারীরিক প্রতিবন্ধি যুবক গুলিবিদ্ধ হয়ে মৃত্যুবরণ করেন।
প্রত্যক্ষদর্শীদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, ডিআইটি, নয়ামাটি কিংবা জালকুড়ির যুব উন্নয়নের সামনে যখন এমপি শামীম ওসমান তার লোকজন নিয়ে গুলি ছোড়েন, তখন পুলিশ কিংবা অন্যান্য আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদেরকে কোথাও গুলি বর্ষন করতে দেখা যায়নি। বহু স্থানে পুলিশের অবস্থানও ছিলো না। এমনকি আন্দোলনকারীদের হাতেও দেখা যায়নি আগ্নেয়াস্ত্র।
ফলে আন্দোলনকারীরা বলছেন, শামীম ওসমান, তার পুত্র অয়ন ওসমান এবং শ্যালক তানভীর আহমেদ টিটুদের পক্ষ থেকে ছোড়া গুলিতে নিহত হতে পারেন শিশু রিয়া গোপ, গার্মেন্ট কর্মী রাসেল এবং প্রতিবন্ধি সুজন। এদিকে, শামীম ওসমানের ভাতিজা আজমেরী ওসমান ও তার ঘনিষ্ঠ সন্ত্রাসীদের হাতেও ছিলো আগ্নেয়াস্ত্র। তারা গাড়ী বহর নিয়ে অস্ত্র সহ মহড়া দিয়েছিলেন।
এদিকে, গতকাল নারায়ণগঞ্জ জেলা বিএনপির সভাপতি ও সাবেক এমপি বীর মুক্তিযোদ্ধা মুহাম্মদ গিয়াসউদ্দিন ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে জেলা বিএনপির অবস্থান কর্মসূচিতে বলেন, ‘আমরা রাজপথে আন্দোলন সংগ্রাম করতে গিয়ে কাউকে ভয় পাইনি, ঐক্যবদ্ধভাবে আন্দোলন সংগ্রাম করেছি। নারায়ণগঞ্জের কুখ্যাত সন্ত্রাসী শামীম ওসমান তার সন্তান ও ভাতিজাদের নিয়ে সেদিন ছাত্র-জনতা ও বিএনপির নেতাকর্মীদের উপর গুলি চালিয়েছিলেন। কোথায় কোথায় সন্ত্রাসী কার্যকলাপ করেছে অগ্নিসংযোগ করেছে এর সকল ভিডিও আমাদের কাছে আছে। তার নেতৃত্বে এবং তার নির্দেশে এগুলা হয়েছিল। বড় বড় কথা বলে এখন সে বোরখা পরে আবারো পালিয়ে গেছেন। এদেরকে কোন অবস্থায় ছাড়া যাবে না। আর আমরা আইনও নিজের হাতে তুলে নেবো না। আমরা তাদের মতন আর কোন অপরাধমূলক কাজ করবো না। আমরা তাদেরকে ধরে আইনের কাছে সোপর্দ করব। চোখ কান খোলা রাখবেন তারা যেন আর কোন নতুন করে কোন ষড়যন্ত্র করতে না পারে। প্রতিটি পাড়া মহল্লায় আপনারা পাহারা দিবেন।’